ফিরে আসা বলে কিছু নেই

ফিরে আসা বলে কিছু নেই
।। শহীদুল ইসলাম মুকুল ।।

মার খেয়ে খেয়ে
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া
অস্থি চর্মসার দূর্বল জনগোষ্ঠিও
এক সময় ফুঁসে উঠে।

বারংবার দমিত হয়
আবার রুখে দাঁড়ায়
চূড়ান্ত বিচারে পরাজিত হয় না কখনো।

সমষ্টির ইতিহাসে পরাজয় শব্দটি
না থাকলেও
কখনো কখনো
ব্যক্তি মানুষ পরাজিত হয়।

যোগ্যতমের বিজয়ের পথে
অযোগ্য‍রা সরে যায়,
সরে যেতে হয়।

বস্তুতঃ ব্যক্তি মানুষের ইতিহাস
দৃষ্টিগ্রাহ্য কিছু জয়ের সাথে
অসংখ্য না জানা ছোট ছোট পরাজয়ের ইতিহাস।

যাপিত অন্ধকারে
জ্বলে উঠা অশুভ স্ফুলিঙ্গ
পুড়িয়ে ভস্ম করার আগেই

আমরা আমাদের কাছে
পরাজিত হওয়ার চেয়ে
এই ভালো ঢের
সরে যাওয়া নিভৃতে!

পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে
ফিরে আসা হয় না
ফিরে আসতে নেই

আমিতো জানি
ফিরে আসা বলে কিছু নেই।

যে মানুষটি চলে যায়
সে মানুষটি ফিরে আসে না কখনো
পুরোনো সে মানুষটিকে ফিরে পাওয়া যায় না কখনো
যেরূপ একই নদীর জলে দু’বার স্নান হয়না...

শততম দুঃখ গাঁথা

শততম দুঃখ গাঁথা
।। শহীদুল ইসলাম মুকুল ।।

আমার মৃত্যুর পর সবকিছুই স্বাভাবিক থাকবে।
কলেজ পড়ুয়া তরুণীরা বরাবরের মতই মুখরিত
আনন্দে প্রধান সড়ক দিয়ে হেঁটে যাবে,
বাতাসে তাদের বেণী দুলবে নিয়মিত ছন্দে।
মুঠোফোনে, এসএমএসে, ইমেইলে বিনিময় হবে হৃদয়ের মৌলিক ভাষা।
আমার মৃত্যুর পর শহরের প্রতিটি রাস্তায়
ট্রাফিক সিগনালগুলো নিয়মিত বিরতিতে জ্বলবে নিভবে
যান্ত্রিক সময় নির্ধারক একমুহুর্তও এদিক ওদিক করবে না।
আমার মৃত্যুর পর সিনেমাহলগুলোতে উপচে পড়া ভীড়ের কমতি হবে না
বক্স অফিসে নতুন নতুন হিট ছবি নতুন আয়োজনে আসতেই থাকবে;
সন্ধ্যার পর জেগে উঠবে মার্কেট, পার্ক, নিষিদ্ধ আনন্দের ঘর।
আমার মৃত্যুর পর শহরের প্রতিটি অলিগলিতে হবে স্বাভাবিক কলরব,
লেকের পাড়ের ঝুলন্ত রেস্তোরায় হাসবে সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ তরুণীরা,
কোথাও সুনসান নিরবতা নামবে না, যেমন নেমেছিলো এক কারফিউর রাত্রিতে।
আমার মৃত্যুর পর আন্তর্জালের জগতে আলোড়ন উঠবে না,
সার্চের ঘরে কৌতুহলী কেউ লিখবে না নাম, জানতে চাইবে না
ঐ মায়ার জগতে আমার কোন অনুভূতি ছড়ানো আছে কি না।

আমার মৃত্যুর পর স্বজনরা কাঁদবে, ওদের কান্নাটাই স্বাভাবিক
— ওটা অস্বাভাবিক নয়, ভীষণ রকম প্রত্যাশিত।
আমার মৃত্যুর পর সবকিছুই স্বাভাবিক থাকবে
কেবল অস্বাভাবিক হবে এক জোড়া জীবিত চোখ
একদিন যে চোখে উপেক্ষার বাণী ছিলো, ছেড়ে যাবার
তাড়না ছিলো, সেই জোড়া চোখ ম্লান হবে মুহুর্তের অপরাধবোধে…

ভালোবাসা কৃষিকাজের মত সোজা নয়

ভালোবাসা কৃষিকাজের মত সোজা নয়
।। শহীদুল ইসলাম মুকুল।।

আমি জানতাম না, ভালোবাসা কৃষিকাজের মত সোজা নয়;
ভালোবাসা এক আগ্রাসী যুদ্ধ -
তাতে যুদ্ধনীতি আছে, কূটনীতি আছে।
অভিজ্ঞ সমরবিদের মত পরিকল্পনা সাজাতে হয়
গবেষণা করে বের করতে হয় প্রতিপক্ষের দূর্বলতা,
সামান্য অন্যমনস্কতায় একটু এদিক ওদিক হলেই
দূর্ভেদ্য দূর্গ উড়ে যেতে পারে কামানের গোলায়।
ভালোবাসা টেকাতে হলে আবিস্কার করতে হয় নিত্য নতুন মারণাস্ত্র,
প্রতিপক্ষের চেয়ে কম বিধ্বংসী হলে ময়দানে নামার
আগেই পরাজিত হতে হয় স্নায়ু যুদ্ধে।

অথচ আমি কি না ভেবেছিলাম-
শ্রম ঘাম দিয়ে বীজ বুনলে,
সময় সময় আগাছা নিড়িয়ে দিলে,
মাটির রঙ বুঝে হাট থেকে সার কিনে দিলে অথবা
আরো ভালো হয় জৈব সার দিলে শস্যক্ষেতে
এবং কয়েকবার করে সেচ দিলেই ফসল ফলবে সোনারঙা!

আমি শালার আজন্ম চাষা,
আজও সৈনিক হলাম না!